০১- জিন যখন মানুষের প্রেমে পড়ে।
এই ক্ষেত্রে পেশেন্টদের আখলাকের (চরিত্রের) দূর্বলতা থাকে। জিনটি তখন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয় তার আইন (নজর) সৃষ্টির মাধ্যমে। দৃষ্টান্ত পেশেন্ট এমন এক চরিত্রের অধিকারী যেখানে নোংরামি অশ্লীলতার জীবন যাপন করা হয়ে থাকে। ফলে মানুষ ও জিনদের কে উক্ত অশ্লীল আখলাকের ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট করে তুলে। পরিণাম মানব ও জিনদের নজরগ্রস্ত হয়ে থাকে৷ এই ভাবে দীর্ঘ একটি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর জিন শয়তান তার আইন হাসাদ ও সিহরের মাধ্যমে,উক্ত ব্যক্তির উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
০২- আপনি যখন জিনের ক্ষতি করে থাকবেন।
যেমন হাদিস বর্ণিত কিছু নিষিদ্ধ স্থান আছে।
যে স্থানগুলোতে জিন শয়তান থাকতে পারে। কিংবা নিষিদ্ধ কিছু সময় আছে। উক্ত স্থানে কিংবা নিষিদ্ধ সময়ে যখন নিজের উপস্থিতিতে এমন কোন কর্মকান্ড সংগঠিত হওয়া। যার মাধ্যমে জিন শয়তান আপনার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জিনগ্রস্ত করতে পারে।
হাদিসে বর্ণিত যে যে স্থান ও সময়ের কথা বলা হয়েছে জিন শয়তান থাকতে পারে।
যেমন ড. উমর আল আশকার তার বিখ্যাত “জিন ও শয়তান জগত” (আরবি) গ্রন্থে বলেন,
“ধ্বংসস্তূপ, জনমানবশূন্য এলাকা এবং নোংরা স্থানে তারা বেশি থাকে। যেমন: গোসলখানা, পেশাব-পায়খানার ঘর, ময়লা ফেলার স্থান, গোরস্থান ইত্যাদি।”
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ هذِهِ الْحُشُوْشَ مُحْتَضَرَةٌ فَإِذَا أَتى أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ. رَوَاهُ أَبُوْ دَاوٗدَ وَاِبْنُ مَاجَةَ
যায়েদ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “এ সব টয়লেটে জিন-শয়তানরা উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যারা টয়লেটে যাবে তারা যেন এ দু’আ পড়ে:
أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ: “আ’উযু বিল্লাহি মিনাল খুবুসি ওয়াল খবায়িস।”
“আমি আল্লাহর নিকট নাপাক নর ও নারী জিন-শয়তান থেকে আশ্রয় চাই।”
[সহীহ-আবু দাউদ/৬, ইবনে মাজাহ্/২৯৬, সহীহুল জামি/ ২২৬৩।]
বাজার-মার্কেটে ইবলিশ এবং তার বংশধর উপস্থিতি বেশি থাকে। এরা সেখানে মানুষকে নানাভাবে ফেতনায় ফেলে ও অন্যায়-অপকর্মে প্ররোচিত করে। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে অবস্থান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি সালমান রা. কে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন,
لَا تَكُونَنَّ إِنْ اسْتَطَعْتَ أَوَّلَ مَنْ يَدْخُلُ السُّوقَ ، وَلَا آخِرَ مَنْ يَخْرُجُ مِنْهَا ، فَإِنَّهَا مَعْرَكَةُ الشَّيْطَانِ ، وَبِهَا يَنْصِبُ رَايَتَهُ
“যদি পারো তাহলে বাজারে সর্বপ্রথম প্রবেশ কারী হয়ো না এবং এমনটাও হয়ো না যে, তুমি হবে সেখান থেকে সর্বশেষ প্রস্থান কারী। কারণ তা শয়তানের যুদ্ধক্ষেত্র। সে সেখানে তার ঝাণ্ডা স্থাপন করে। (সহিহ মুসলিম, হা/ ২৪৫১)
কারণ বাজারগুলোতে বিভিন্ন প্রকার অন্যায় কার্যক্রম সংঘটিত হয়। যেমন: ধোঁকাবাজি, প্রতারণা, মিথ্যা কথা, কসম, বাতিল চুক্তি, নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে হারাম দৃষ্টিপাত, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা। এসব হয় ইবলিস ও তার সহযোগীদের প্ররোচনায়।
এ ছাড়াও হাদিস থকে জানা যায় যে, ইবলিশ সাগরে তার সিংহাসন স্থাপন করে এবং সেখান থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তার বাহিনী প্রেরণ করে। জাবির রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ إِبْلِيْسَ يَضَعُ عَرْشَهُ عَلَى الْمَاءِ، ثُمَّ يَبْعَثُ سَرَايَاهُ، فَأَدْنَاهُمْ مِنْهُ مَنْزِلَةً أَعْظَمُهُمْ فِتْنَةً
“ইবলিশ পানির উপর (অন্য বর্ণনায় সাগরে) তার সিংহাসন স্থাপন করত: তার বাহিনী প্রেরণ করে। তাদের মধ্যে তার সর্বাধিক নৈকট্য প্রাপ্ত সেই, যে সর্বাধিক ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে।” (সহিহ মুসলিম)
“যখন রাত নামে (সন্ধ্যার শুরুতে) তোমাদের সন্তানদের ঘরের বাইরে যেতে বারণ কর। কারণ শয়তান এই সময়ে বের হয়। আল্লাহর নাম নিয়ে ঘরের দরজাগুলো বন্ধ কর। কারণ শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।” (বুখারী, ১০/৮৮. মুসলিম ১৩/১৮৫)
০৩- কেউ যখন আপনাকে (ব্ল্যাক ম্যাজিক) কালো যাদু করে থাকে তখন আপনি জিনগ্রস্ত হবেন। কেননা
জিনের সাহায্য ছাড়া কখনো কাউকে যাদুগ্রস্ত করা সম্ভবনা। এবং জিনের সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া যাদু কার্যকর করা যায় না। প্রত্যেক যাদু চর্চাকারীর নিকট পালিত জিন শয়তান থাকে। কিংবা যাদুকর উক্ত জিন শয়তানের পূজা করে থাকে৷ আর সে জিন শয়তান গুলো কে যাদুকর তখন খাদিমুস শয়তান
(তথা যাদুর পিছনে নিয়োজিত শয়তান)হিসাবে কাজ করিয়ে থাকে। যাদুকর যে উদ্দেশ্য প্রণীতভাবে যাদুকে সাজিয়ে গুছিয়ে তুলে, তখন সে যাদুর সাজানো গোছানোর বাস্তবতার পরিচর্চা করে এই যাদুর খাদিম জিন শয়তান গুলো।
জিন যাদু বদ নজর ও হাসাদের প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে। কুরআন ও সুন্নাহর আকড়ে ধরতে হবে, কেননা ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আর সেই জীবন ব্যবস্থাকে এটা জীবনের সাথে বাস্তবতার সাথে অনুসরণ করতে হবে।
No comments:
Post a Comment